Channel23.news
অদিত্য রাসেল,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :
সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীতে দেশের সব চেয়ে বড় রেল সেতুর নির্মান কাজ শুরু
হতে যাচ্ছে। রোববার (২৯ নভেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন
থেকে ভিডিও কনফরেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মান
কাজের শুভ উদ্বোধন ও ভিত্তিফলক উম্মোচন করবেন। জাপানের সহায়তায় ২০২৪ সালে
সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হলে দেশের রেল যোগাযেগের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে।
এই রেলসেতু দেশের মানুষের কাছে আর্শীবাদ হিসেবে ধরা দেবে বলে মনে করছেন
রেলপথ মন্ত্রণালয়।
যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও
পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। সড়কের
পাশাপাশি সেতুতে রেল সংযোগও রয়েছে। এই সেতুতে রেল চলে ধীর গতিতে। রেল
চলাচল করায় বঙ্গবন্ধু সেতু রয়েছে হুমকীর মুখে।
সেতুর উপর ধীর গতিতে রেল চলায় ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।
বঙ্গবন্ধু সেতুকে রক্ষাকরণ, যাত্রীদের দুর্ভোগ দুর করতে ও দেশের রেল
যোগাযোগ আরো উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার যমুনা নদীর উপর আলাদা একটি রেল
সেতু নির্মান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। যমুনা নদীতে নতুন রেলসেতু নির্মাণের
মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে। এতে সহজেই পার হতে পারবে উত্তর
ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলো। যাত্রী ভোগান্তি কমার পাশাপাশি প্রসার
ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও। এমনকি যাতায়াতে সময় কম লাগবে। দেশের তৃণমূল
পর্যায়ে আর্থিক সচ্ছলতা বাড়বে বলে রেল যাত্রীরা মনে করছেন।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে
উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। প্রথমে ৪টি ট্রেন
দৈনিক ৮ বার পারাপারের পরিকল্পনা থাকলেও যাত্রীর চাহিদায় পরে তা বাড়ানো
হয়। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দিলে কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের
গতি। বর্তমানে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন স্বল্প গতিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেল স্টেশন মাষ্টার মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন,
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে ২৪ ঘন্টায় ১৬ জোড়া নিয়মিত যাত্রীবাহি
ট্রেন পারাপার হয়। এছাড়া তেল ও পণ্যবাহী ট্রেনও চলাচল করে। বঙ্গবন্ধু
সেতুতে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে এসব ট্রেন। এছাড়া,
সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, দীর্ঘ সময়। এতে দুভোর্গের সীমা থাকে না
রেল ষ্টেশনের কর্মী ও যাত্রীদের। রেলসেতু নির্মাণ করা হলে কোনো ট্রেনই
কোনো প্রকার সিডিউল বিপর্যয় ঘটবে না। সময় সাশ্রয় হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই
সেতু পারাপার হওয়া যাবে। একটি ট্রেন আরেকটি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করবে
না। এতে উপকৃত হবে রেল যাত্রীরা। ইতিমধ্যে রেলপথ মন্ত্রী ও রেলওয়ে
বিভাগের উদ্ধতন কর্মকর্তারা রেল সেতু নির্মানের স্থান পরিদর্শন করেছেন।
অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রস্তুতি সভা। বন্ধু প্রতিম দেশ জাপানের জাইকার
সহযোগীতায় এ রেল সেতু নির্মাণ হবে। সেতুটির নির্মাণ কাজ দুটি ভাগে হবে।
একটি সিরাজগঞ্জ অংশে, অন্যটি টাঙ্গাইল অংশে। রেল সেতু প্রকল্পের বাইরেও
আরেকটি প্রকল্পে ঢাকা জয়দেবপুর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন
রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
এর ফলে একটি লাইনে রেল ঢাকার দিকে যাবে, আরেকটি লাইন দিয়ে বিপরীত দিকে
যাবে। একই সঙ্গে রেলপথের মাধ্যমে ভারি মালামাল পরিবহনে কন্টেইনার পরিবহন
বাড়বে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের কন্টেইনারসমূহ দেশ-বিদেশে পরিবহন করা হবে। ১শ’
কিলোমিটার গতিতে সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল করতে পারবে। জাপানের আর্থিক
সহায়তায় এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের
আগস্ট মাসে রেল সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
উদ্বোধনের সূচিতে জানা যায়, সকাল ১০ টা ৩১ মিনিটে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন,
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা। এর পর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন
করা হবে। ১০ টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি
বক্তব্য রাখবেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে ১০টা ৪২ মিনিটে রেলপথ
মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সভাপতির বক্তব্য দেবেন। পরে ভিডিও কনফরেন্সের
মাধ্যমে ১০ টা ৪৬ মিনেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর
স্থাপন করবেন।