সাতক্ষীরার ফসলের মাঠে এখন যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই শুধু সরিষা ফুলের সমারোহ। সরিষার হলুদ ফুলের গন্ধে মধু সংগ্রহ করতে উড়তে দেখা যাচ্ছে মৌমাছিদের।
কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি বছর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে চাষ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় ২১ হাজার ৭৬৭ দশমিক ২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যেখানে গত ৫ বছর আগে চাষ হতো মাত্র ৮ হাজার ৯৫৫ হেক্টর। কয়েক বছরের ব্যবধানে জেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। চাষের সময় আর খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষ বাড়ছে। গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে শস্যটির ফলনও আগের চেয়ে বেড়েছে। এ কারণে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দিন দিন বাড়ছে সরিষার চাষ। মূলত সয়াবিনের উচ্চ মূল্যের কারণে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে সরিষার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কয়েক বছরে বেশকিছু নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, বিনার সরিষা হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১ দশমিক ৮ টন। জীবনকাল মাত্র ৮৭ দিন। বাড়তি ফলন ও কম সময়ের কারণে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।
অপরদিকে বাজারে দাম ভালো দাম পাওয়ায় সরিষা চাষে আশার আলো দেখছেন কৃষকেরা। বাজারে সরিষা ফুল ও সরিষা শাকেরও চাহিদা বাড়ছে। ফলে ফুল ও শাক বিক্রি করেও বাড়তি উপার্জন করছেন অনেকে।
তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের কৃষক শামছুর রহমান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৫-৭ মণ করে সরিষার ফলন হবে।প্রতি বিঘায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বর্তমান ভোজ্যতেলের চাহিদার শতকরা ৯০ ভাগ বিদেশ থেকে আনতে হয়। এতে বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশে ৫০ ভাগ তেল উৎপাদনের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমাতে ৩ বছর মেয়াদী রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। চলতি মৌসুমে ২৮ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি ও বিনার উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলোর ফলন বেশি। এ কারণে এতে চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করতে পারছেন। এতে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।’