ইসলামিক ডেস্ক : মৃত্যুর পর মানুষ নিজের ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান পাবে। এ সময় মুমিনরা চিরস্থায়ীভাবে জান্নাত লাভ করবে এবং কাফিররা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। ঈমান ও নেক আমল ভালো কাজ জান্নাত লাভের প্রধান শর্ত। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখবে এবং ভালো কাজ করবে তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদ-নদী প্রবাহিত হয়, যেখানে তারা চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ১১)
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জান্নাতি মানুষের বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো : রাগ সংবরণ ও মানুষকে ক্ষমা করা জান্নাতি মানুষের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা রবের ক্ষমার দিকে দৌড়ে যাও এবং জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, রাগ সংবরণ করে, মানুষকে ক্ষমা করে এবং আল্লাহ অনুগ্রহ কারীদের ভালোবাসেন। যারা অশ্লীল কাজ করলে বা নিজেদের ওপর অন্যায় করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে..।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩-১৩৫)
কোমল হৃদয় ও ক্ষমতার অধিকারী : হাদিসে ক্ষমতাবান লোকদের মধ্যে যারা সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ, তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। ইয়াজ বিন হিমার (রা.) থেকে বর্ণিত, একটি দীর্ঘ হাদিসে জান্নাতি ও জাহান্নামিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। তাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতি।
এক. যারা ক্ষমতাবান, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং ভালো কাজের তাওফিক পেয়েছে। দুই. যারা দয়ালু এবং আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিমদের প্রতি কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিন. যারা পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, ভিক্ষা করে না এবং পরিবার ও সন্তানাদি সম্পন্ন লোক। আর পাঁচ ধরনের মানুষ জাহান্নামি। এক. দুর্বল লোক, যার জ্ঞান-বুদ্ধি নেই, যারা তোমাদের অনুসরণ করে এবং তাদের পরিবার ও সম্পদের প্রতি আগ্রহ নেই- অর্থাৎ নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি ব্যবহার করে হারাম থেকে বাঁচতে বৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করে না।
দুই. খিয়ানতকারী, ছোট বিষয়েও যার লোভের কথা কারো অজানা নয়। তিন. ওই ব্যক্তি যে সম্পদ ও পরিবারের বিষয়ে তোমার সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা প্রতারণা করে। অতঃপর তিনি কৃপণতা, মিথ্যা বলা ও গালমন্দ করার কথা উল্লেখ করেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৮৬৫)
বিভিন্ন হাদিসে জান্নাতিদের পরিচয় হিসেবে দুর্বল ও অসহায় মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হারিস ইবনে ওয়াহাব খুজাঈ (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আমি কি তোমাদের জান্নাতি মানুষের পরিচয় বলব? তারা বলল, অবশ্যই বলুন। তিনি বলেন, প্রত্যেক দুর্বল ও বিনয়ী ব্যক্তি, তারা কোনো ব্যাপারে আল্লাহর নামে শপথ করলে তা পূরণ করে। আমি কি তোমাদের জাহান্নামি মানুষের পরিচয় বলব? তারা রূঢ় স্বভাবের, বেশি মোটা ও অহংকারী। তারাই জাহান্নামি। (বুখারি, হাদিস : ৪৯১৮)
নারী-পুরুষের মধ্যে যারা জান্নাতি : একটি হাদিসে জান্নাতি পুরুষ ও নারীদের কথা এসেছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের জান্নাতি পুরুষদের সম্পর্কে জানাব না? (তারা হলো) নবী, সত্যবাদী, আল্লাহর পথে শহীদ, জান্নাতের শিশু যারা ছোটবেলায় মারা গেছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শহরের আরেক প্রান্তে অন্য ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এবং তোমাদের স্ত্রীরাও জান্নাতি, যারা বেশি প্রেয়সী, সন্তানদাত্রী, যতবার ভুল করে ততবার স্বামীর কাছে ফিরে আসে। তার স্বামী রাগ করলে সে স্বামীর হাতে হাত রেখে বলে, আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না। (নাসায়ি, হাদিস : ৯১৩৯)
মৃত্যুর পর ইতিবাচক সাক্ষ্যদান : জান্নাতি হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের ইতিবাচক প্রশংসা গুরুত্বপূর্ণ। আবু জুহাইর আল-সাকাফি (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) নাবাওয়াহ নামক এলাকায় আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। নাবাওয়াহ তায়েফের একটি এলাকার নাম। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শিগগির তোমরা জান্নাতিদের জাহান্নামিদের থেকে পৃথকভাবে চিনতে পারবে। সবাই বলল, হে আল্লাহর রাসুল, কিভাবে চিনব? তিনি বলেন, ভালো প্রশংসা ও মন্দ প্রশংসার মাধ্যমে। কারণ তোমরা পৃথিবীতে একে অন্যের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাক্ষী হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪১৯)
মৃত ব্যক্তির উত্তম প্রশংসা : আনাস (রা.) বলেন, কিছু লোক একটি জানাজার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মৃতলোকের উত্তম প্রশংসা করে। তখন রাসুল (সা.) বলেন, অবধারিত হয়েছে। অতঃপর আরেকটি জানাজা অতিক্রমকালে তার দুর্নাম করে। তখন রাসুল (সা.) বলেন, অবধারিত হয়েছে। ওমর (রা.) বললেন, কী অবধারিত হয়েছে? রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা যে ব্যক্তির প্রশংসা করেছ তার জান্নাত অবধারিত। আর যার দুর্নাম করেছ তার জাহান্নাম অবধারিত। তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী। (বুখারি, হাদিস : ১৩৬৭)