আমাদের শরীরের ওপর আমরা যা খাচ্ছি তার প্রভাব পরে। কিন্তু জানেন কী খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব আমাদের মনের ওপরেও পরে? প্রতিদিন বিভিন্ন কারণে আমাদের অনেক মানসিক চাপ ও স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। স্ট্রেসের কারণ রক্তচাপসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই মানসিক চাপ মুক্ত থাকা অনেক বেশি প্রয়োজন।
অনেকে অতিরিক্ত চাপে থাকলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খান। এছাড়া অনেকের চা, কফির মতো ক্যাফেইন যুক্ত খাবারের প্রবণতাও বেড়ে যায়। তবে এইসব খাবার সাময়িকভাবে ভালো লাগা তৈরি করলেও দীর্ঘ স্থায়ীভাবে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিষণ্ণতা, উদ্বেগ ও স্ট্রেসের মতো সমস্যার বাড়িয়ে দেয়। তাই মানসিক চাপ কমাতে প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে দেহে ফ্রি র্যাডিকেল তৈরি হয় যা ক্যান্সারের মতো অনেক জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক চাপের ধকল নিতে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে হয় ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ওজন কমে যায়। স্ট্রেসের ফলে অনেকে অতিক্ত খারিবার গ্রহণ করে আবার অনেকে খাবারের অনিয়ম করে। দুটোই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, দুশ্চিন্তা কিংবা মানসিক চাপে থাকলে শরীরের ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে যায়।
তাই মানসিক চাপে থাকলে শরীরের ম্যাগনেসিয়াম ব্যালেন্স করতে ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে অস্টিওপোরেসিসের সমস্যা হতে পারে। হাড় দুর্বল ও ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে প্রবল। তাছাড়া ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে মন খারাপ ও বিষন্নতা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ঘাটতি হলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। তাই চাপমুক্ত থাকার জন্য খেতে পারেন কাঠবাদাম। এতে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। কাঠবাদাম যখন তখন অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়। এছাড়া সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।
অনেক সময় অতিরিক্ত চাপে রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে আসে তখন খেজুর কিংবা কিশমিস খেতে পারেন। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক সুগার যা শরীরের খুব বেশি ক্ষতি করে না। তবে ডায়বেটিস থাকলেও প্রাকৃতিক সুগারও বুঝে খেতে হবে। প্রতিদিনের খাবারের প্রোটিন থাকা অনেক বেশি জরুরি। কিন্তু মানসিক চাপে থাকলে প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ রাখুন। মাছ স্ট্রেস্ট হরমোনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তৈলাক্ত মাছে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। ঢেঁড়সের নাম শুনলে অনেকেই নাক ছিটকাতে পারে কিন্তু ঢেঁড়স আমাদের শরীরে ডোপামিন রিলিজের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। ডোপামিনের ওপরই আমাদের মানসিক অবস্থা নির্ভর করে, এটি আমাদের সুখের ও ভালোলাগার অনুভূতি দেয়।
এমন একটি খাবার আমাদের মানসিক চাপ কমাতে পারে যার নাম শুনলে অনেকেই খুশি হবেন তা হলো ডার্ক চকলেট। এটি আমাদের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন ২০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেতে। কথায় আছে প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায়। আপেল যে শুধু আমাদের শরীর ভালো রাখে তা নয়। আস্ত একটি আপেল খেলে আমাদের মনের চাপও কমে আসে। এছাড়া গাজর খাওয়া যেতে পারে। খাবারের তালিকায় রাখুন কমলা লেবু। মন খারাপ থাকলে কমলা লেবু খেলে মূহুর্তেই আপনার মন প্রফুল্ল হতে পারে।
মানসিক চাপে থাকলে ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে ও জাঙ্ক ফুড এর প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যেতে পারে। জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা কমাতে খেতে পারেন মিষ্টি আলু। মিষ্টি আলু খেতেও মজাদার ও এর ফলে অনেক অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে যাওয়া যায়। প্রতিদিন একটি কলা খান, কলা বিষণ্ণতা কমায় ও মন ভালো রাখে।
মানসিক চাপে থাকলে ভাজাপোড়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে নিজের খাদ্যাভ্যাসের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার যোগ করুন। আমাদের অজান্তেই অস্বাস্থ্যকর ও অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার আমাদের মানসিক চাপকে অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। শরীরকে সুস্থ রাখার মতোই মানসিক ভাবে অসুস্থ থাকতে প্রয়োজন রুটিন মাফিক জীবন। সঠিক খাদ্য অভ্যাসের পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়ম মেনে ব্যায়ামও কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করতে হবে।