নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ উত্তাঞ্চলের জেলা নেত্রকোনায় শুরু হয়েছে আউশ ধান আবাদ। এ ধান আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেত্রকোনার কৃষকরা। নেত্রকোনা অঞ্চলে তিন জাতের ধান বোরো, আমন,আউশ আবাদ হয়। জাত তিনটি হলো-হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয়। কম পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার ও সেচ ছাড়াই আউশ ধান আবাদ হওয়ায় আউশ ধান চাষে কৃষকরা দিন দিন উৎসাহিত হচ্ছেন।
চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫ শত ৬০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪ শত ১৮ থেকে ৪ হাজার ৪ শত ৩১ টন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নেত্রকোনা সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নেত্রকোনা জেলায় ১ হাজার ৫ শত ৬০ হেক্টর, জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নেত্রকোনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শাহজাহান সিরাজ জানান, এ অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫ শত ৬০ হেক্টর জমিতে। আউশের আবাদ বৃদ্ধির জন্য এ অঞ্চলের কৃষকের মধ্যে ব্যাপকহারে বীজ প্রদান করা হয়। এছাড়া কৃষি অফিস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আউশ আবাদ বৃদ্ধির জন্য।
নেত্রকোনার কৃষকরা জানান, প্রতিবছর বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আউশ ধান রোপণ করা হয়। আর আষাঢ-শ্রাবণে কাটা হয়। নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বীর পাগলী গ্রামের কৃষক এরশাদুর রহমান জানান, তিনি ১০ থেকে ১২ দিন আগে থেকে আউশ ধান বুনা শুরু করেছেন।
জেলা কৃষি অফিস জানায়, আউশ ধান বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় সেচ বাবদ কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে। ভুগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও দিন দিন কমছে। আউশ ধান চাষ করতে কোনো সেচ দিতে হয় না। বৃষ্টির পানি দিয়েই চাষ করা যায়। অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন হয় না। সে সঙ্গে আউশ ধানক্ষেতে ধইঞ্চা গাছ রোপণ করলে সেখানে পাখি এসে বসে। পাখি ক্ষতিকর পোকাগুলো খেয়ে ফেলে। এতে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করলেও চলে। বিষমুক্ত চাল পাওয়া যায়। মাত্র ৯০ দিনে প্রতি বিঘা জমিতে অতিরিক্ত ১৬ থেকে ১৮ মণ চাল পাওয়া যায়। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা অঞ্চলে আউশের আবাদ ভালো বেড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নেত্রকোনা অঞ্চলে আউশের আবাদ কম হয়েছে। ২০১৯-২০ সালে আবাদ আউশ আবাদ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। বেশি বৃদ্ধি পায় ২০২১-২২ অর্থবছরেও। এ বছর আউশ আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫ শত ৬০ হেক্টর জমি। আরো জানা যায়, নেত্রকোনা সদর উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ শত ৪২ মেট্রিকটন, পূর্বধলায় ১২০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ শত ৪২ মেট্রিকটন, দূর্গাপুর উপজেলায় ১৪০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ শত ৯৯ মেট্রিকটন, কলমাকান্দা উপজেলায় আউশ আবাদ হয়েছে উফশী ১৪০ স্হানীয় ১০ হেক্টর জমিতে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২শত ৮৩ মেট্রিকটন, মোহনগঞ্জ উপজেলায় আউশ আবাদ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ মেট্রিকটন, বারহাট্টা উপজেলায় আউশ আবাদ হয়েছে ৬০ হেক্টর জমিতে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১শত ৭১ মেট্রিকটন, কেন্দুয়া উপজেলায় আউশ আবাদ হয়েছে ৪শত ৫০ হেক্টর জমিতে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২শত ৮৩ মেট্রিকটন, ও মদন উপজেলায় আউশ আবাদ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১শত ৪২ মেট্রিকটন, এবং খালিয়াজুরী উপজেলায় বোরো ও আমন ছাড়া আর কোনো ধান চাষ করা হয় না। সব মিলিয়ে এবছর ১ হাজার ৫শত ৬০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে সফল ভাবে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শাহজাহান সিরাজ জানান, নেত্রকোনা জেলার ১০ উপজেলায় ১ হাজার ৫ শত ৬০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শনিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৩ শত ৯০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আউশ ধানের আবাদে কৃষক স্বল্প খরচে ধান ঘরে তুলতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যত্ত করেন।