নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ দেশের বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অযুহাতে নেত্রকোনায় প্রতিটি বাজারে বেড়েই চলেছে ওষুধের দাম। বিভিন্ন রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যখন তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা- এমন পরিস্থিতিতে আকস্মিক ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন তারা।
নেত্রকোনার ওষুধ প্রশাসনসহ এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণেই দেশের বাজারে এসব ওষুধের দাম বাড়নো হয়েছে। তাদের দাবি- কাঁচামালের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
বিশেষ সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় ওষুধের পুনঃনির্ধারিত দাম অনুমোদন করা হয়।
এ বিষয়ে বিষয়ে নেত্রকোনা ঔষধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়ম মেনেই ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। একটি টেকনিক্যাল কমিটি ওষুধ উৎপাদনকারীদের প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করে মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। এরপর ওষুধের মূল্য পুনর্মূল্যায়ন করে সেগুলোর নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আচমকা বাড়ানো হয়েছে বিষয়টা এমন নয়।
দেশের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের হাতে। ওষুধের এই মূল্যবৃদ্ধির আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে মানুষকে জানানোর নিয়ম। কিন্তু তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে শুধুমাত্র কোম্পানিগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ নেত্রকোনার সাধারণ ক্রেতাদের,তালিকায় থাকা ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, অ্যামোক্সিসিলিন, খাবার স্যালাইন।
এদিকে এর কারণ হিসেবে মো. আইয়ুব হোসেন নামক এক ব্যক্তি বলেন, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে বাজারে ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। কোম্পানিগুলো কিছু ওষুধ উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছে না। সবকিছু পর্যালোচনা করে ওষুধ প্রশাসনের মূল্য নিয়ন্ত্রণ কমিটির পরামর্শক্রমে সরকার ওষুধগুলোর দাম আপডেট করেছে।
নেত্রকোনার সাধারণ ক্রেতাদের বক্তব্য- ‘চারদিকে অসুস্থতা। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষকে আরেক সংকটে ফেলে দিচ্ছে। চিকিৎসাসামাগ্রী সহজলভ্য করার পরিবর্তে বাড়ানো হচ্ছে, যা একেবারেই অনুচিত।
বিশেষ সূত্রে বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, ৮০ পয়সার প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের দাম হবে ভ্যাটসহ ১ টাকা ২০ পয়সা। ১৮ টাকার প্যারাসিটামল সিরাপ হবে ৩৫ টাকা। ২০০ এমজির মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেটের দাম ৪০ পয়সা বেড়ে হবে ১ টাকা। ১ টাকার আড়াই’শ এমজির মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট হবে ১.২৫ পয়সা। ১২ টাকা বেড়ে মেট্রোনিডাজল সিরাপের সবোর্চ্চ খুচরা দাম হবে ৩৫ টাকা। আর ১০০ এমএল সিরাপের দাম ৫ টাকা বেড়ে হবে ৪৫ টাকা। অ্যান্টিবায়েটিক অ্যামোক্সিসিলিন সিরাপের দাম ৪ টাকা বেড়ে হবে ৩৫ টাকা। ২৫০ এমজির প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ৪০ পয়সা বেড়ে হবে ৪ টাকা। ১ টাকা বেড়ে ৬ টাকায় কিনতে হবে খাবার স্যালাইন প্রতি প্যাকেট। অ্যাসপিরিন প্রতিটির দাম ৩০ পয়সা বেড়ে হবে ৮০ পয়সা।
দাম বৃদ্ধির তালিকায় আছে, নাকের ড্রপ, ফলিক এসিডসহ অন্যান্য গ্রুপের আরও কিছু ওষুধের দাম। ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনের পর শিগগির কার্যকর হবে এসব ওষুধের দাম।
এবিষয়ে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস বলেন, নেত্রকোনায় কিছুতেই ঔষধের নির্ধারিত দামের বাহিরে দাম বাড়ানো যাবে না,আর যদি কেউ ঔষধের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে কাজ করছে।