গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ভয়াবহতা এবং তাতে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মাত্রা আরও বাড়ছে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না হলে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করা হতে পারে। একইসঙ্গে ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্সের নেতারাও সরাসরি ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে টালমাটাল হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক আবহাওয়া।
সোমবার (১৯ মে) ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, “ইসরায়েল যদি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তার পাশে থাকবে না।” প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
তবে এই দাবিকে “হাস্যকর” ও “অমূলক” বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন মার্কিন প্রশাসনের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “মতপার্থক্য থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র কখনো ইসরায়েলকে ত্যাগ করবে না।” ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবিও এই বক্তব্যকে ‘অর্থহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
এদিকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিট জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে এবং সেখানে মানবিক বিপর্যয় এড়াতে চান। তিনি বলেন, “মানুষ সেখানে অনাহারে মরছে, ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট এর অবসান চান।”
এর আগেও গোপন আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত মার্কিন সেনা এডান আলেকজান্ডারকে মুক্ত করে এনেছে। এই আলোচনায় ইসরায়েলকে সম্পৃক্ত না করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় নেতানিয়াহু সরকারের ভেতরেও।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও চাপ বাড়ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত সোমবার ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্স এক যৌথ বিবৃতিতে গাজায় চলমান সামরিক অভিযান ও ত্রাণপ্রবাহে বাধা দেওয়ায় ইসরায়েলের সমালোচনা করে। তারা সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, “মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করা অগ্রহণযোগ্য এবং এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। প্রয়োজনে আমরা ব্যক্তিবিশেষ বা সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব।”
এই তিন দেশ ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে এবং দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা গাজায় দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রবাহের দাবি জানায়।
তবে এই বক্তব্যের জবাবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিসের নেতারা ৭ অক্টোবর হামলার পর ইসরায়েলের আত্মরক্ষাকে উপেক্ষা করে সন্ত্রাসীদের পুরস্কৃত করছে। এভাবে তারা ভবিষ্যতের আরও রক্তপাতকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল যতক্ষণ না পূর্ণ বিজয় অর্জন করছে, ততক্ষণ যুদ্ধ চলবে। আমরা হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং সব জিম্মির মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত পিছু হটব না।”
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। সেখানে খাদ্য, পানি, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে সংকটাপন্ন। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় গাজার সব বাসিন্দা।
এই ভয়াবহতার মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে ইসরায়েলের ওপর চাপ। মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ ও মানবিক সঙ্কটের দায়ে ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন করার পথে হাঁটছে অনেক পশ্চিমা দেশ। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এই ঘটনাগুলো বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।