![Image](https://cdn.channel23.news/images/84a3b420328019ae4f99b9cdf599c7a9.jpeg)
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধিঃ দক্ষিনের মৃদু বাতাস। কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি। সাগরের জোয়ারের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক ঢেউ সৈকতে এসে আঁছড়ে পরছে। আর আকাশের কালো মেঘের ঘনঘটা জানান দিচ্ছে বর্ষার আগমনের বার্তা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে সাগর কন্যা কুয়াকাটার সৈকত। তবে পদ্মা উদ্ভোধনের পর থেকেই এসব পর্যটকের আগমন বেড়ে গেছে। এ যেন প্রকৃতি আর পর্যটকের নীবিড় সেতুবন্ধন। তাদের কাছে বর্ষার সমুদ্র বিলাস আলাদা অনুভূতি। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে গোসল ও সাতার কাটতে মাইকিং করে সচেতন করছেন ট্যুরিষ্ট পুলিশ। কিন্তু এমন সচেতনতায়ও আগত পর্যটকরা বিচলিত হচ্ছে না।
শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সমুদ্রে গোসল, হই হুল্লোড়, ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আনন্দ উল্লাস ও উম্মাদনায় মেতে ওঠে নানা বয়সের পর্যটকরা। সাতার কাটা, ওয়াটার বাইকে ঘুরে বেড়ানো, ঢেউয়ের সাথে গাঁ ভাসিয়ে দিয়ে সৈকতে গড়াগড়ি খাচ্ছে পর্যটকরা। এমন ছন্দময় সময়কে স্বরণীয় করে রাখতে অনেকেই ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তুলছে। কেউ কেউ ছাতার নিচে বসে সমুদ্রের ঢেউ ও প্রকৃতি উপভোগ করছে। আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পায়রা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটকদের ব্যাপক চাপ রয়েছে। আরও ব্যাপক সমাগম ঘটবে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের এমনটাই জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগত পর্যটকরা শুটকি পল্লী, গঙ্গামতির লেক, রাখাইন পল্লী, ঝাউবন, লেম্বুর বন, লাল কাকড়ার চর, তিন নদীর মোহনা, কুয়াকাটার কুয়া, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, মিশ্রিপাড়ার সীমা বৌদ্ধ বিহারসহ অধিকাংশ পর্যটন স্পট এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখর। বর্ষার আগমনী শুরু হওয়ায় সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। স্বাভাবিকের জোয়ারের চেয়ে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢেউ এসে আছঁড়ে পরছে সৈকতের ভূ-ভাগে। এমন রুদ্র মূর্তি দেখে কেউ কেউ ভয়ে সমুদ্রে নামছে না। আবার অনেক এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটক ও দর্শনার্থীরা সমুদ্রের এমন দৃশ্য দেখে খুশি।
পর্যটক রাসেল মোল্ল স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কুয়াকাটা ভ্রমণে এসেছেন। তারা বর্ষার সমুদ্র এবং উত্তাল ঢেউ দেখে মুগ্ধ। শীতের সমুদ্র এবং বর্ষার সমুদ্রের রুপ সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার মতে সমুদ্রের রুপ উপভোগ করতে হলে বর্ষা মৌসুমেই আসা উচিত। এদিকে সাংবাদিক এসকে রঞ্জন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই পর্যটকরা কুয়াকাটায় আসতে শুরু করেছে। এসব পর্যটকার বেড়াতে আসার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়।
আবাসিক হোটেল সমুদ্র বিলাসের পরিচালক জানান, ছুটির দিনে অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে। তার হোটেলের অধিকাংশ রুমই বুক রয়েছে। তবে শীত মৌসুমের চেয়ে অনেক কম ভাড়ায় রুম বুকিং দিয়েছেন তিনি। এতে পর্যটকরাও খুশি বলে জানান এই হোটেল মালিক।
কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক মো.হাসনাইন পারভেজ জানান, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় তারা সার্বক্ষণিক সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দক্ষিনে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানায় এ সমুদ্র সৈকত পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা অবস্থিত। বর্তমানে কুয়াকাটা পৌরসভায় উন্নীত হয়েছে। দীর্ঘ ১৮ কি:মি: দৈর্ঘ্য এবং ৩ কি:মি: প্রস্থ এ সৈকত। পর্যটকদের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা "সাগর কন্যা" হিসেবে পরিচিত। সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।
বিশাল বিশাল ঢেউয়ের গজর্নে যেকোনো আগন্তুককে বিমোহিত করবে। এ সময়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর মজাই আলাদা। নিড়িবিলি পরিবেশ। উপচেপড়া পর্যটকদের কোলাহল নেই । নেই হোটেলে-মোটেলগুলোতে সিট না পাবার বিড়ম্বনা। রেস্তোরাগুলোতেও খাবারের দাম থাকে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম। কুয়াকাটা নাম শুনলেই চোখের সামনেই ভেসে ওঠে চির সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আদিবাসী রাখাইন পাড়া। লাল কাঁকড়ার ছুটাছুটি। আর বিশাল সাগর। এসব কারনে ভ্রমন পিয়াসীদের কাছে ভ্রমনের উৎকৃষ্ঠ সময় বর্ষাকাল এমনটাই জানিয়েছেন আগত প।
কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। কুয়াকাটা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। বরিশাল বিভাগের শেষ মাথায়। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার সর্ব দক্ষিণে এ সমুদ্রসৈকত। বর্তমানে কুয়াকাটা পৌরসভায় উন্নীত হয়েছে। কুয়াকাটা সৈকতের দৈর্ঘ্য ১৮ কিমি এবং প্রস্থ ৩ কিমি। ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার, বরিশাল থেকে ১০৮ কিলোমিটার। পর্যটকদের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা "সাগর কন্যা" হিসেবে পরিচিত। কুয়াকাটা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।
সৈকত ঘেঁষেই আছে সারি সারি নরিকেল বাগান। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ সমুদ্রের ঢেউ। ঢেউগুলো যখন এসে পায়ের ওপর আছড়ে পড়ে, তখন স্নিগ্ধতায় মন ছুঁয়ে যায়। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বদিকে রয়েছে আকর্ষণীয় স্থান গঙ্গামতির চর। সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার জিরোপয়েন্ট থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পূর্বদিকে গড়ে তোলা হয়েছে পরিকল্পিত ইকোপার্ক। ৭০০ একর জায়গা জুড়ে এ পার্কটি অবস্থিত। এ পার্কের বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও শোভাবর্ধনকারী ৪২ হাজার বৃক্ষ রয়েছে।