নিজস্ব প্রতিনিধি : শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের নামে অভিনব কায়দায় টাকা হাতিয়ে নিতে তৎপর একটি প্রতারক চক্র। বিনিয়োগ করার এই ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সর্বস্ব হারিয়ে দেশের আইন আদালতের দারস্থ হলে মিলছে না প্রতিকার। কারণ ততদিনে প্রতারক চক্র উধাও। এমনই এক প্রতারক চক্রের সন্ধান মিলেছে রাজধানীর বাড্ডা থানায়। সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন ভূঁইয়া পাড়া এলাকার মৃত মেজবু’র ছেলে সাইদুজ্জামান (৩৫) একই এলাকার কালু মিয়ার ছেলে আব্দুন নূর (৫০) এর সাথে দীর্ঘদিনের পরিচয় ও সুসম্পর্ক সুবাদে বিভিন্ন সময় পার্টনারে স্টক একচেঞ্জ (শেয়ার) ব্যবসা করার নিমিত্তে ছোট ছোট অংকের টাকা ধার নিতেন ও পরিশোধ করতেন। এভাবেই প্রতারক সাইদুজ্জামান বিশ^াস অর্জন করার পর একটি চেকের বিপরীতে সর্বমোট ২,৪০,৫০,০০০/= (দুই কোটি চল্লিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা হাতিয়ে নিয়ে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী আব্দুন নূর চেকের মেয়াদে চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে উল্লেখিত একাউন্টে কোন টাকা না থাকায় চেকটি ডিজঅনার হয়ে যায়। প্রতারক সাইদুজ্জামানকে টাকা পরিশোধের জন্য বিগত ২৫/০৬/২০২৩ইং তারিখে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করে। কিন্তু ২৬/০৬/২০২৩ইং তারিখে লিগ্যাল নোটিশ এর প্রাপ্তি স্বীকার করার ১ মাস পরেও পাওনা টাকা পরিশোধ করার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখান নাই প্রতারক সাইদুজ্জামান। পরবর্তীতে ২১/০৮/২০২৩ইং তারিখে আব্দুন নূর বাদী হয়ে সাইদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ এসি এম এম-১ আদালত নং- ০২ ঢাকা বরাবরে ১৩৮ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং- ৩৭৬/২০২৩।
ঘটনার অনুসন্ধানে গিয়ে সাইদুজ্জামান সম্পর্কে বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জানা যায় প্রতারণার বাণিজ্য করতে এক সময়ের মসজিদের ক্যাশিয়ার এই সাইদুজ্জামান গড়ে তুলেছেন একটি চক্র। আর এই চক্রের মাধ্যমেই তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে একই কায়দায় আত্মসাৎ করেছে কোটি কোটি টাকা। যাদের নাম এবং টাকার পরিমান ক্রমানুযায়ী দেওয়া হলো: (১) নূর হোসেন- ৫ লক্ষ টাকা, (২) তারিফ সরকার- ২১ লক্ষ টাকা, (৩) হামিদা আক্তার- ১৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, (৪) রনি- ৩৬ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা, (৫) মফিজুল- ৫০ লক্ষ টাকা, (৬) হাফিজা- ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, (৭) আল-আমিন- ৬ লক্ষ টাকা, (৮) সাইদ- ৬০ লক্ষ টাকা, (৯) শিপন- ৫ লক্ষ টাকা, (১০) মমিনুল- ৯ লক্ষ টাকা, (১১) ইকবাল গং- ৩০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, (১২) আল আমিন- ২৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, (১৩) ইয়াজ মোহাম্মদ- ১৮ লক্ষ টাকা, (১৪) ফাহিমা- ৭ লক্ষ টাকা, (১৫) তাজ মোহাম্মদ- ৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, (১৬) রাজু আহমেদ- ৫ লক্ষ টাকা, (১৭) চকন গং- ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, (১৮) হাবিব- ৭০ লক্ষ টাকা, (১৯) শাহিন- ২৭ লক্ষ টাকা, (২০) কাউসার- ২০ লক্ষ টাকা, (২১) আমিনুল- ৫ লক্ষ টাকা, (২২) নাদিম- ৫ লক্ষ টাকা, (২৩) রবিন- ১০ লক্ষ টাকা, (২৪) রনি- ৩৭ লক্ষ টাকা, (২৫) আবুল কালাম- ৫লক্ষ টাকা, (২৬) তাইজুল ইসলাম- ১১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, (২৭) আলম- ১০ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, (২৮) সুমন- ৩৫ লক্ষ টাকা, (২৯) রাশেদুল- ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, (৩০) মোঃ রাজিব হোসেন- ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, (৩১) আসলামুজ্জামান স্বপন- ৮ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, (৩২) হাফিজুল্লাহ্- ৬ লক্ষ টাকা, (৩৩) দ্বীন মোহাম্মদ- ৬ লক্ষ টাকা, (৩৪) উজ্জ্বল- ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, (৩৫) ফয়সাল- ২৬ লক্ষ টাকা, (৩৬) হোসনে আরা- ৮ লক্ষ টাকা, (৩৭) মোঃ কবির হোসেনÑ ৬ লক্ষ টাকা ও (৩৮) আমিন- ১৮ লক্ষ টাকা।
প্রতারক সাইদুজ্জামান এর এই চক্রের আরো সদস্য হলেন (১) আয়েশা বেগম ও (২) সোহেল যারা সবই বর্তমানে ওয়েরেন্টভুক্ত আসামী। সাইদুজ্জামানকে ধরিয়ে দিতে ৫ লক্ষ টাকার পুরস্কারের ঘোষনা দিয়েছেন ভূক্তভোগীরা। এ প্রতারক চক্রের মূল হোতা সাইদুজ্জামানসহ তাদের সহকারীদের অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবীর জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীরা।